• আপডেট টাইম : 06/04/2023 07:07 PM
  • 42 বার পঠিত

আল্লাহপাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, তিনি আমাদেরকে সুস্থতার সাথে রমজানের রোজাগুলো রাখার সৌভাগ্য দান করছেন, আলহামদুলিল্লাহ।

আজকে আমরা মাগফিরাতের দশকের ৪র্থ দিন অতিবাহিত করছি। দ্রুতই রমজানের দিনগুলো চলে যাচ্ছে, তাই পুণ্যকর্মের কোনো দিক বাদ দেয়া চলবে না। সব ধরনের পুণ্যকর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। সুনিয়ন্ত্রিত সুখাদ্য যেমন দেহকে সুস্থ, সবল ও আনন্দময় করে, তেমনি সুনিয়ন্ত্রিত ইসলামি রোজা আত্মাকে সুস্থ, সতেজ ও আল্লাহ প্রেমিকে পরিণত করে। এ মাসে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন।

বিশ্বনবীর (সা.) কল্যাণমণ্ডিত পুরো জীবন এ বিষয়ের জীবন্ত সাক্ষি, তিনি শান্তি ও নিরাপত্তার এক মহান মূর্তিমান প্রতীক হিসেবে জীবনযাপন করেছেন এবং চরম প্রতিকূল ও কঠিন পরিস্থিতিতেও শান্তির পতাকা উঁচু রেখে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, কুরআনি শিক্ষামালার ওপর আমল করলে পরেই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তার মাক্কী জীবনী এবং মাদানী যুগেও তার পুরো জীবনাদর্শ এমনসব ঘটনাবলীতে পরিপূর্ণ যে, কীভাবে মহানবী (সা.) তার মান্যকারীদেরকে কুরআনের শিক্ষামালার কল্যাণে শান্তির মূর্তিমান প্রতিক বানিয়ে দিয়েছেন।

যুদ্ধ ক্ষেত্রেও তিনি মুসলমানদের সামনে এক পরম সহানুভূতিপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ উত্তম নৈতিক আদর্শ উপস্থাপন করেছেন। যুদ্ধের নাম নিলেই তো বর্তমান যুগের নাম সর্বস্ব সভ্য দেশগুলো নম্রতা, নৈতিক আচরণ, সহমর্মিতা এবং ন্যায়বিচারের সকল দাবি সম্পূর্ণভাবে ভুলে যায় কিন্তু বিশ্বশান্তির মহানায়ক হজরত মুহাম্মদ (সা.) যুদ্ধ এবং হানাহানির ক্ষেত্রসমূহে শান্তি ও নিরাপত্তার উন্নত মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে এমন অতুলনীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছেন যা সকল যুগে পুরো মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে। মক্কা বিজয়ের দৃষ্টান্ত এ বিষয়ে স্পষ্ট সাক্ষি। তার সকল খুনি শত্রুদের ক্ষমা করে বিশ্ব ইতিহাসে সেই দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছেন যা কিয়ামত পর্যন্ত এর কোনো উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিভিন্ন চুক্তি পালনের ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) সর্বদা এমন আদর্শ দেখিয়েছেন যার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

আমরা জানি, মহানবীর (সা.) যুগে সাহাবীরা অনেক বেশি কুরআন পাঠ করতেন। গভীর রাতে তাদের ঘর থেকে তেলাওয়াতের গুণ গুণ রব উত্থিত হত। রাতের অন্ধকারে মহানবী (সা.) তাদের গৃহপার্শ্বে গিয়ে তাদের সুমধুর তিলাওয়াত শ্রবণ করতেন।

কুরআন মজিদ মনোযোগ সহকারে এবং সুন্দরভাবে পাঠ করা সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘সে আমাদের দলে নয়, যে সুর করে কুরআন পড়ে না’ (বুখারী)।

কুরআন পাঠের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘কুরআন পাঠ কর, কেননা বিচার দিবসে এটি পাঠকের শাফায়াতকারী হবে’ (মুসলিম)। কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সাহাবীদের (রা.) প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রেরণ করতেন। হিজরতের পূর্বে তিনি হজরত মুসআব ইবনে উমাইয়ার (রা.) এবং হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাফতূম (রা.)কে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য মদীনায় প্রেরণ করেন। তিনি (সা.) কুরআনের শিক্ষা নিঃস্বার্থভাবে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন।

এছাড়া রমজান এবং পবিত্র কুরআন করিমের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেভাবে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে— ‘রমজান সেই মাস যাতে নাযেল করা হয়েছে কুরআন যা মানবজাতির জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াত ও ফুরকান (অর্থাৎ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী) বিষয়ক সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এই মাসকে পায়, সে যেন এতে রোজা রাখে, কিন্তু যে কেউ রুগ্ন এবং সফরে থাকে তাহলে অন্য দিন গণনা পূর্ণ করতে হবে, আল্লাহ্ তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না, এবং যেন তোমরা গণনা পূর্ণ কর এবং আল্লাহর মহিমা কীর্তন কর, এই জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হেদায়াতে দিয়েছেন এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর’ (সূরা বাকারা: আয়াত ১৮৫)।

পবিত্র রমজান মাসেই মহানবী (সা.) আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রথম বাণী লাভ করেছিলেন। এ রমজান মাসেই হজরত জিবরাইল (আ.) বছরের পূর্বে অবতীর্ণ হওয়া সমস্ত বাণী হজরত রাসুল করিম (সা.)এর কাছে পুনরাবৃত্তি করতেন। এ ব্যবস্থা মহানবীর (সা.) জীবনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

এছাড়া ‘মহানবীর (সা.) জীবনের শেষ বছরের রমজান মাসে হজরত জিবরাইল (আ.) পূর্ণ কুরআনকে মহানবীর (সা.) কাছে দু’বার পাঠ করে শুনান’ (বুখারি)। এ থেকে বুঝা যায়, রমজানের সাথে কুরআনের সম্পর্ক সুগভীর। এ পবিত্র মাসে রোজার কল্যাণ, আজ্ঞানুবর্তিতা এবং কুরআন পাঠ এই সব ইবাদত একত্রে মানবচিত্তে এক আশ্চর্য আধ্যাত্মিক অবস্থা সৃষ্টি করে।

এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, ‘রমজান ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, খোদা! আমি তাকে পানাহার এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিবৃত্ত রেখেছি, তাই তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। আর কুরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রে নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি এবং তাকে ঘুমাতে দেইনি, এ কারণে তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে’ (বায়হাকি)।

আমরা যেহেতু রমজানের রোজাগুলো ঠিকভাবেই রাখছি, তেমনিভাবে যদি কুরআন পাঠের প্রতি এবং এর মর্মার্থ উপলব্ধি করার দিকে মনোযোগী হই তাহলে এ কুরআনই আমাদের সুপারিশের কারণ হবে।

এছাড়া রোজা রেখে কুরআন করিম পাঠ করা, এর অর্থ বুঝতে চেষ্টা করা এবং এর অনুশাসনাদি পালন করার মাধ্যমে মানুষের আধ্যাত্মিক দর্শনশক্তি সতেজ হয়। মানুষ শয়তানি চিন্তাভাবনা ও প্রভাব হতে নিরাপদ থাকে। অধিকন্তু মানুষ এক অনাবিল আধ্যাত্মিক প্রশান্তি এবং পরম সম্পদ লাভ করে যা শুধু অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই উপলব্ধি করা যায়, এটি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।

আমাদের উচিত হবে, রমজানের এই দ্বিতীয় দশকে নিজেদের ইবাদতে আমূল পরিবর্তন আনা আর বেশি বেশি পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও এর অর্থ বুঝে নিজ জীবনে তা বাস্তবায়ন করা। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে পবিত্র কুরআনের শিক্ষার আলোকে জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

এইচআর/এএসএম

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা...